রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইতালির রোমে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) পরিচালনা পরিষদের ৪১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে তিনি এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দুর্যোগে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরিতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ অন্যতম প্রধান বিষয়। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা ছাড়া এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। ’
দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে উন্নয়ন সহযোগীদের আরো উদার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এটার জন্য বিশ্ব এখন প্রস্তুত। আমি আপনাদের সকলকে টেকসই গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। ’
অধিবেশনে ‘নাজুকতা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে তেজি ভাব : টেকসই গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুসহ একাধিক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সহায়তা অব্যাহত থাকার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে আইএফএডি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। ’ তিনি বলেন, আইএফএডির সহায়তা ও সহযোগিতার মডেলটি জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা থেকে অনেক ভিন্ন। আইএফএডির এই মডেলটি মানবতায় এখনকার মতো অনাগত দিনগুলোতেও কাজ করে যাবে।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা স্থাপন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যাবে না। গ্রামীণ সামাজিক ও জলবায়ুগত স্থিতিশীলতার উন্নয়নে একটি ব্যাপকভিত্তিক টেকসই গ্রামীণ অর্থনীতি প্রয়োজন। তিনি টেকসই গ্রামীণ অর্থনীতি তৈরিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রায় এক দশক ধরে সুশাসন থাকায় বাংলাদেশ ভাগ্যবান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সাথে চার বছরের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি হিসাব করে আমাদের কৌশল নির্ধারণ করেছি এবং গত ৯ বছর ধরে এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে চাহিদা ও প্রয়োজনের মধ্যে সমন্বয় করেছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৯ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে এবং এর অর্ধেক হবে মধ্যবিত্ত। এর ফলে বিশ্বের আবাদি জমি, বনভূমি এবং পানির ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়বে। ’ তিনি বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে অনেক দেশের আবাদি জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৫০ সালে বিশ্বের খাদ্যচাহিদা ২০০৬ সালের অবস্থান থেকে অন্তত ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে এবং খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ৮৪ শতাংশ দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশিরা আস্থার সঙ্গে শক্তভাবে লড়াই করে সমস্যার সমাধান এবং সংকট কাটিয়ে উঠতে বিকল্প উপায় গ্রহণের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করে।
আইএফএডির প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট ফাউসন হোউংবোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সবাইকে আইএফএডির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান এবং সংস্থাটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
‘রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহে দাতাগোষ্ঠীর আগ্রহ কমছে’ : স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় রোমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিজলি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মানবিক সংস্থাটি বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডাব্লিউএফপি আগের মতোই পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ডেভিড বিজলি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের খাওয়ানোর ব্যাপারে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তবে আমরা জাতিসংঘের ব্যবস্থার আওতায় দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এই আগ্রহটা ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। ’
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডাব্লিউএফপি মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেল কক্ষে রোমে বাংলাদেশের অনারারি কনসালও সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে তাঁদের আন্তরিকভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বন্যাপ্রবণ ছয় জেলায় আইএফএডির বিনিয়োগ : উত্তরাঞ্চলের ছয়টি বন্যাপ্রবণ জেলায় তিন লাখ তিন হাজার পরিবারের জীবিকার মানোন্নয়নে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ছয় বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন আইএফএডির প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট এফ হাংবো এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হিসেবে দেবে আইএফএডি। এ ছাড়া সংস্থাটি ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেবে অনুদান হিসেবে। আর বাংলাদেশ সরকার দেবে ২৭.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পটি গাইবান্ধা, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার ২৫টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।
কালের খবর/১৪/২/১৮